সানট্যান

জনপ্রিয় আর্টিকেল

সানট্যান কি? এর প্রভাব ও দূর করার কার্যকরী সব উপায়

আর্টিকেল এর সূচিপত্র

সানট্যান হলো ইউভি রশ্নির ফলে ত্বকে তৈরিকৃত এক প্রকার কালো দাগ।  বর্তমান সময়ে তরুণী এবং মহিলাদের একটি অন্যতম সমস্যা হলো সানট্যান। সাধারণত ১৮-২০ বছর এবং তারপর থেকে যে কোনো বয়সী মানুষের মধ্যেই এ সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে মনে করেন, শুধু মেয়েরাই ট্যান এর শিকার হয়। কিন্ত আসলে একথা ঠিক নয়। মেয়েদের মতো ছেলেরাও দীর্ঘক্ষন বাইরে রোদে থাকার কারণে তাদেরও ট্যান পড়তে পারে। তবে মেয়েরা বেশি সৌন্দর্য সচেতন হওয়ার কারণে তাদের সমস্যাটি বেশি চোখে পড়ে।

সানট্যান কি?

দিনের আলোতে বের হলে সূর্যের আলো সরাসরি মেলানিন হরমোনের উপর পরে, যা সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্নি শুষে নেয়। এর ফলে পরবর্তীতে ত্বকে কালো দাগ ফেলে, এটি সানট্যান হিসেবে পরিচিত।

সানট্যানের নেতিবাচক প্রভাবঃ

বাংলাদেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ হলেও প্রতি বছর গরমের পরিমাণ আগের চাইতে বাড়ছে। এর অর্থ হলো- সূর্যের উত্তাপও দিন দিন বাড়ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব আমাদের শরীরে অনেক ভাবেই পড়ছে। বিশেষ করে আমাদের ত্বকের উপর। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা একেবারেই সচেতন নই। সানট্যানের প্রভাব গুলো নিচে তুলে ধরা হয়েছেঃ

১. সানট্যান দেখা দিলে মুখের বিভিন্ন জায়গায় ছোপ ছোপ কালো দাগ পড়ে, যা দেখতে খারাপ দেখায়।
২. আবার অনেকের মুখের কোনো অংশ সাদা, কোনো অংশ কালো হয়ে থাকে। মানে ত্বকের রঙের তারতম্য দেখা যায়, যার অন্য নাম আনইভেন স্কিন টোন।
৩. হাইপার পিগমেন্টেশন এর জন্য চেহারায় মলিনতা চলে আসে।
৪. অনেকের মুখের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে চোখের নিচে ও চারপাশে, নাকে, নাকের দু’পাশে বাদামি রঙের ছোট ছোট অসংখ্য তিল হতে দেখা যায়, যা মুখশ্রী নষ্ট করে দেয়।
৫. এছাড়াও দীর্ঘদিন সানট্যান দূরীকরণের চেষ্টা না করার কারণে অনেকে মেছতা বা মেলাজমার শিকার হয়।

সানট্যান কেন হয়?

অনেকটা সময় বাইরে রোদে থাকলে সানট্যান হয়ে থাকে। মুখ, হাত, পা কালো দেখায়। ঘরে থাকা অবস্থায়ও ট্যান হতে পারে। বাড়িতে, বারান্দায় বা রুমের ভেতরে জানালা দিয়ে আলো প্রবেশ করে থাকে। এমনকি রান্নার কাজে চুলার পাশে থাকলে আগুনের তাপেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শুধু ঘরের বাইরে থাকলেই মেছতা বা কালো ছোপ ছোপ দাগ হবে। আর ঘরে বসে থাকলে এরকম কোনো সমস্যাই হবে না। এরকম ভাবার কোনো প্রশ্নই নেই। বাইরের দেশের ছোট-বড়, ছেলে-মেয়ে সকলেই ট্যান পড়া নিয়ে দারুণ সচেতন।

ট্যান দূরীকরণের উপায়ঃ

আমাদের দেশের অনেকেই হয়তো বা ইদানিং এ সম্পর্কে একটু আধটু বোঝে, কিন্তু পুরোপুরি ত্বকের যত্নটা নিতে পারে না। তাই আজ আমরা কথা বলবো কী কী সাবধানতা অবলম্বন করলে সানট্যান হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

১. প্রথমেই সঠিক খাদ্যাভ্যাসের নিয়ম করতে হবে। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় ভিটামিন সি, গাজর এবং সবুজ শাকসবজি রাখতে হবে। বিশেষ করে ভিটামিন সি এবং গাজর ত্বক উজ্জ্বল রাখতে অনেক সাহায্য করে।
২. প্রচুর পানি পান করতে হবে। পানির কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদিন নূন্যতম আট থেকে দশ পানি পান করুন। এক মাসের মধ্যে পরিবর্তনটা নিজেই বুঝতে পারবেন। আপনি হতই হেলদি খাবার খান এবং ত্বকের পরিচর্যা করুন না কেন, আপনার শরীর যদি ডিহাইড্রেটেট থাকে, তবে কোনো ফর্মূলাই কাজে দেবে না।

ব্রণ দূর করার উপায়, ১০ টি কার্যকরি ঘরোয়া পদ্ধতি

৩. শুধু ভালো খাবারই যে আপনার ত্বককে রোদে পোড়া হতে দূরে রাখতে পারবে, এমনটা নয়। ঘরে বা বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন, ‘সান প্রোটেকশন ক্রীম বা সান্সক্রিন’ ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। অনেকেই মনে করেন গ্রীষ্মকালে রোদের তাপ বেশি থাকে তাই শুধু এ সময়টায় সান্সক্রিন ব্যবহার করলেই চলবে। কিন্তু তা একেবারেই ভ্রান্ত ধারণা। রোদ- বৃষ্টি- শীত বার মাসই সান্সক্রিন ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইউভি রশ্নি আমাদের ত্বকে বেশি প্রভাব ফেলে।
৪. এছাড়াও গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত সবসময়ই স্কার্ফ, ছাতা এবং সানগ্লাস ব্যবহার করা প্রয়োজন। এই জিনিস গুলোর সঠিক ব্যবহার আপনার ত্বক সূর্যের ক্ষতিকর রশ্নি থেকে অনেকটাই সুরক্ষিত থাকবে।

ঘরোয়া টোটকা ব্যবহারঃ

উপরোক্ত নিয়ম গুলো মেনে চললে সানট্যান হওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে আসবে। আর যাদের অসাবধানতাবশত ট্যান হয়ে গিয়েছে। তারা কিছু ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যেমনঃ

১. এক চা চামচ কাঁচা হলুদের পেষ্ট বা গুঁড়া, এক চা চামচ দুধ এবং আধা চা চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে প্যাকটি ত্বকে ১৫-২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে এলে ঠান্ডা ও পরিস্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে এক বা দু’বার ব্যবহার করতে পারেন। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে কাঁচা হলুদ খুবই কার্যকরী।
২. আধা চা চামচ কাঁচা হলুদের গুঁড়া বা পেস্ট এবং এক চা চামচ মধুর সাথে এক চা চামচ কমলার খোসা বেটে বা এর গুড়া মিক্স করে প্যাক তৈরি করুন। ১৫ মিনিটের মতো মুখে লাগিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তবে যাদের ত্বক ড্রাই বা সেনসিটিভ বা এলার্জি আছে, কমলার খোসা তাদের এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
৩. মাঝারি সাইজের একটি পাকা পেঁপের চার ভাগের এক ভাগ পেষ্ট করুন। এর সাথে এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ১০-১৫ মিনিটের জন্য মুখে লাগিয়ে তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এখানে পাকা পেঁপে ত্বকের পোড়া ভাবটা কমিয়ে আনবে এবং লেবুর রস উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে দারুণ কাজ করে। যদি কারোও ত্বকে লেবুর রস স্যুট না করে, তবে এটা স্কিপ করে মধু বা শসার রস বা শুধু ঠান্ডা পানিও দেওয়া যেতে পারে।

আর্টিকেল লেখার নিয়ম – বাংলা আর্টিকেল লিখে টাকা ইনকাম করার সেরা ১০ টি নিয়ম

৪. মাঝারি আকারের ২টি টমেটোর পেষ্ট তৈরি করে তার সাথে এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। তারপর প্যাকটি মুখে লাগিয়ে রাখুন এবং ১০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রচুর তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদের জন্য এই প্যাকটা দারুণ কাজ করবে।
৫. অ্যালোভেরা জেল এর সাথে শসার রস বা পেষ্ট এবং মধু মিশিয়ে প্যাকটি মুখের যেসকল স্থানে বেশি কালচে দেখায়, সেসব স্থানে লাগিয়ে রেখে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি একদিন পর পর লাগাতে পারেন।
৬. রোদে পোড়া দাগ দূর করার জন্য আরেকটি উৎকৃষ্ট উপাদান হলো কফি। কফি পাউডারের সাথে বেসন, কাঁচা হলুদ ও মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। ১৫-২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে প্যাকটি ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই দিন এই প্যাকটি ব্যবহার করলে দারুণ ফলাফল পাবেন।
৭. মসুরের ডাল বেটে পেষ্ট তৈরি করুন। এর সাথে কাঁচা হলুদ, বেসন ও শসার রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। মুখে ১৫-২০ মিনিট প্যাকটি লাগিয়ে রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন এই প্যাকটি লাগিয়ে এক মাসের মধ্যে নিজেই পরিবর্তনটা বুঝতে পারবেন।

লেডিস স্যালন বা পার্লারঃ

এছাড়া ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করা ছাড়াও কিছু লেডিস স্যালন বা পার্লারে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে ট্রিটমেন্ট নিয়ে সানট্যান দূর করা সম্ভব। যার ফলাফল পাবেন মাত্র কয়েক ঘন্টায়। যেমনঃ

১. লেজার ট্রিটমেন্টঃ

লেজার ট্রিটমেন্ট নামটি আমাদের অনেকের কাছেই পরিচিত। এর কাজ হলো ত্বকের ড্রাই এবং মৃত কোষ দূর করা। ফলে সূর্যের আলোর ক্ষতিকর দাগ দূর করতে সাহায্য করে।

২. এক্সফোলিয়েটরঃ

বাজারে অনেক ব্রান্ডের এক্সফোলিয়েটর কিনতে পাওয়া যায়। ভালো মানের এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করুন আপনার ত্বকের ধরণ বুঝে। এটি ত্বকের কালো দাগসহ মৃত কোষ তুলে ফেলতে সাহায্য করে।

৩. ব্লিচিংঃ

ব্লিচিং হলো তাৎক্ষণিক কালো দাগ দূর করার একটি অভিনব পদ্ধতি। এটি আপনার ত্বকের মৃত কোষ তুলে দাগ ছোপ একেবারে কমিয়ে ফেলে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। তবে অতিরিক্ত ব্যবহারে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।

৪. কেমিক্যাল পিলঃ

কেমিক্যাল পিল ট্রিটমেন্ট অন্যান্য ট্রিটমেন্টের চাইতে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এ ট্রিটমেন্ট নেওয়ার পরে সানট্যান একেবারে দূর হয়ে যাবে, সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়বে। তবে এর কিছু ক্ষতিকর দিকও আছে, তাই কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

এছাড়াও বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। আর উল্লেখ্য ট্রিটমেন্ট গুলো খুব কাজে দিলেও এগুলো বেশ ব্যয়বহুল এবং সবসময় এই ট্রিটমেন্ট গুলো চালিয়ে যেতে হয়। কিন্তু এর তুলনায় ঘরোয়া উপাদান দিয়ে ঘরে বসে ত্বকের পরিচর্যা করলে ত্বকে সমস্যা হওয়ার কম ঝুঁকি থাকে এবং খরচও কম হয়। তবে এক্ষেত্রে আলসেমি বা অনিয়ম করা যাবে না। নয়তো ত্বকের কোনো উন্নতিই হবে না। আর ঘরোয়া উপাদানে তৈরি প্যাক ধীরে ধীরে কাজে দিবে। তাই ধৈর্য্য নিয়ে নিয়মিত রূপচর্চা চালিয়ে যেতে হবে।

আর্টিকেলটি শেয়ার করতে পারেন আপনার ব্যবহৃত সোশ্যাল মিডিয়া গুলোতে। এ ধরনের বিভিন্ন তথ্য পেতে প্রতিদিন আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। পাঠক বিডির পাঠক হয়ে সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

গুগল নিউজে পড়ুন- পাঠক বিডি

আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার পরিচতদের সাথে শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
Twitter
Email
Print
Pathokbd Logo
সাবস্ক্রাইব
নোটিফিকেশন
guest
Ratting
2 মতামত সমূহ
মতামত
নতুন পুরাতন
Inline Feedbacks
সব কমেন্ট দেখুন
অপরিচিতা
অপরিচিতা
অতিথি
January 15, 2024 8:58 pm
Ratting :
     

রোদে তো বের হতেই হয়। একদিকে রোদ অপর দিকে ত্বকের যত্ন।

Tasnia Jahan
Tasnia Jahan
অতিথি
January 22, 2024 1:38 am
Ratting :
     

Valo Kichu share korlen… 🙏

Copyright © 2024 PathokBD.com