বিন্দুর ছেলে

সাম্প্রতিক আর্টিকেল

বিন্দুর ছেলে (PDF)

বিন্দুর ছেলে গল্পটির লেখক হলেন- বাংলা সাহিত্য জগতের উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক হলেন কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় | শরৎচন্দ্র ছিলেন একাধারে যেমন ঔপন্যাসিক, সেই সাথে ছিলেন একজন প্রাবন্ধিক ও গল্পকার | তাঁর বিখ্যাত কিছু উপন্যাস আজও বাঙালী পাঠকদের বিশেষভাবে মন কাড়ে | বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনপ্রিয়তার জন্য তিনি “অপরাজেয় কথাশিল্পী” নামেও বিখ্যাত |

প্রথম কথাঃ

একান্নবর্তী পরিবার আধুনিক যুগে খুব কমই দেখা যায়। এমনকি গ্রামীণ পরিবেশেও এ পরিবার ভেঙে গিয়ে গড়ে উঠছে একক পরিবার। কিন্তু শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘বিন্দুর ছেলে’ উপন্যাসটিতে তুলে ধরেছেন এমনই এক একান্নবর্তী পরিবারের সুখ-দুঃখের কাহিনী। যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় গ্রামীণ জীবনের কথা। ইটের শহরে পাশে বসে থাকা একই পরিবারের অন্য সদস্যের জীবনে কী ঘটে চলেছে, তা নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহই নেই। কিন্তু উপন্যাসের বড় ভাই যাদব আর তার বউ অন্নপূর্ণা সবসময় ছোট ভাই মাধবের বউ বিন্দুবাসিনীর মনের খবর রাখতেন। অভিমানী ছোট বউকে খুশি দেখতে নিজের কোলের সন্তানকে দিয়ে দিতেও দু’বার ভাবে নি অন্নপূর্ণা।

লেখক পরিচিতিঃ

বাঙালি লেখক, ঔপন্যাসিক ও গল্পকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এই কথাসাহিত্যিকের একটি জনপ্রিয় গল্প বই ‘বিন্দুর ছেলে’। তাঁর বেশকিছু উপন্যাসও অন্যান্য অনেক ভাষায় রূপান্তর করা হয়েছে।

কাহিনী সংক্ষেপঃ

যাদব ও মাধব একই মায়ের পেটের ভাই নয়, তবুও তাদের মধ্যে অসম্ভব মিল। বড় ভাই যাদব ও ভাইয়ের বউ বেশ যত্ন করে এতো অভাব – অনটনের মধ্যেও মাধবকে আইন পাশ করিয়েছে। তারপর বেশ পছন্দ করে মাধবের জন্য তারাই পছন্দ করে ঘরের বউ করে নিয়ে এলো বিন্দুবাসিনীকে। বিয়ের কিছু দিন পর দেখা গেলো, জমিদার কন্যা বিন্দুবাসিনী অনেক অভিমানী। সামান্য কিছু হলেই মূর্ছা যাওয়া তার স্বভাব। অন্নপূর্ণা কখনও ছোট বউয়ের কথা বা আচরণে কষ্ট পেলেও তা মনে পুষে রাখে নি। বিন্দুর মন সে খুব ভালো করেই বুঝতো। সে জানতো, বিন্দু অভিমানী হলেও ভাসুরকে কতোটা ভালবাসে, নিজের ভাইয়ের মতোই সম্মান করে। আর অন্নপূর্ণার উপরও সে অনেকটাই নির্ভরশীল। তাই বিন্দু রাগ করে কথা না বলে থাকলেও অন্নপূর্ণা তা পারে না। সে নিজে থেকেই বিন্দুর সাথে ভাব জমাতে যায়।

বিন্দুর রাগঃ

তখন বিন্দুর রাগ কমে গেলে সেও আবার আগের মতো অন্নপূর্ণার সাথে ক্ষণিকের জন্য মিশে যায়। তারপর আবার কোনো না কোনো কারণে অন্নপূর্ণার সাথে রাগ করে বসে থাকে। ভাসুর যাদবের কাছে নালিশও জানায়। যাদবও তার কথা বেশ শুনে, তারপর বুঝায়। সে যা বলে তাই মেনে নেয়। এভাবে চলতে থাকে তাদের প্রতিটা দিন। যাদব এবং অন্নপূর্ণা তার এই ছেলেমানুষী মেনে নেয় বলেই তাদের পরিবারে কখনও ঝগড়া বিবাদ ঘটে না। তবে বিন্দুর রাগ করার ফলে মূর্ছা যাওয়ার বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার যে ব্যাপারটা, এতে অন্নপূর্ণা বেশ ভয় পায়। একবার কোনো কারণে তেমনই অভিমান নিয়ে বসেছিল বিন্দু।

আরো পড়ুন-

 

আবার না অজ্ঞান হয়ে যায় তার জন্য অন্নপূর্ণা তাড়াতাড়ি করে নিজের ছেলেকে দিয়ে দেয় বিন্দুর কোলে। সেই থেকে ছেলে অমূল্য তার হয়ে গেল। বিন্দু আর কখনো অসুস্থ হয় নি। এর মানে বিন্দুর এই রোগের ঔষধ হলো অন্নপূর্ণার ছেলে অমূল্য। অমূল্যকে পাওয়ার পর ছেলেকে খুব ভালোবাসতে শুরু করে বিন্দুবাসিনী। অমূল্যকে নিয়েই তার যত রাজ্যের ব্যস্ততা। এমনকি অন্নপূর্ণার সাথে দু’দিন পরপর মনোমালিন্য হলেও সে অমূল্যকে এতটুকুও অযত্ন করে না। এভাবে অনেক দিন যাওয়ার পর অমূল্য যে তার নিজের সন্তান নয় সে কথা বিন্দু ভুলেই গেলো। ছেলে অমূল্যও বিন্দুকে নিজের মা হিসেবেই চিনে বড়ো হলো। যাদবের বোন তাদের বাড়িতে ছেলেসহ এসে উঠলে, বোনের ছেলে নরেনের সাথে অমূল্যের মেলামেশা বিন্দু একদম পছন্দ করে না।

যাকে এই বিষয়ে বলে সে। কিন্তু অন্নপূর্ণারই বা কি করার আছে এখানে। সে চাইলেই তো আর বরের বোনকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলতে পারে না। বখে যাওয়া নরেনের সাথে থেকে থেকে অমূল্যও অনেক বদভ্যাসের মধ্যে যোগ দেয়। যা দেখে বিন্দু অন্নপূর্ণার সাথে বেশ রাগ করে। এভাবে জায়ের সাথে দূরত্ব বেড়ে গেলেও ছেলের প্রতি তাদের মমত্ববোধ কমে না। এই অভিমানের জের ধরে বিন্দু আত্নহুতির সিদ্ধ্যান্ত নিলেও ধৈর্য্যশীল যাদব ও অন্নপূর্ণা এবং ছেলে অমূল্যের ভালোবাসায় বিন্দু সুস্থ হয়ে ওঠে।

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ

সংসারে যত অশান্তিই হোক না কেন, মাতৃত্বের খণ্ডন কখনো সম্ভব নয়। ছেলের খাওয়া-দাওয়া, স্কুলে যাওয়া, খেলতে যাওয়া সবকিছু নিয়েই অন্নপূর্ণার সাথে বিন্দুর প্রায়ই মনোমালিন্য হতে থাকে৷ বিশেষ করে নরেনের সাথে মিশে বখে যাওয়া নিয়েও বিন্দু অন্নপূর্ণার সাথেই রাগারাগি করে। তবুও অন্নপূর্ণা বিন্দুকে ভালোবাসে বলে ছেলেকে তার থেকে সরিয়ে নিজের কাছে নিয়ে যায় না। আবার বিন্দুও জায়ের সাথে মুখ ভার করে রাখলেও ছেলেকে নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। এখানে তার যে মাতৃস্নেহ ফুটে উঠেছে, তা আমরা অনেকেই নিজের সন্তান ছাড়া অন্য কারোও প্রতি দেখাতে পারি না। কিশোরদের পড়ার মতো উপযোগী একটি বই হলো ‘বিন্দুর ছেলে’। অসাধারণ মাতৃত্ববোধের একটি উজ্জ্বল নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় এই উপন্যাসটিতে। অসাধারণ একটি অনুভূতি টের পাওয়া যায় বিন্দু আর অমূল্যের ভালোবাসার মধ্যে।

মনে রাখার মতো কিছু লাইনঃ

১. “তোমার রণচণ্ডী মূর্তি দেখলে যার বুকের রক্ত জল না হয়ে যায় সে এখনো মায়ের পেটে আছে! কিন্তু অতো রাগ ভালো নয় ছোটোবউ! এখনো কি ছোটোটি আছিস?”

২. “একটিবার! আজ থেকে চিরকালের জন্যই মাপ করলুম। আর বলব না। আর কথা কব না। সে যে এমনি করে চোখের সামনে একটু একটু করে উচ্ছন্নে যাবে, তা সইতে পারব না – তার চেয়ে একেবারে যাক। ”

৩. “মাধব বলিল, বেশ তো, অন্তত যাও বৌঠানের কাছে। যাতে তার রাগ পড়ে, তিনি প্রসন্ন হন, তাই কর। আমার পা ধরে সমস্ত দিন বসে থাকলেও উপায় হবে না।”

৪. “বিন্দু মুখ ফিরাইয়া বলিল, দাও দিদি কি খেতে দেবে। আর অমূল্যকে আমার কাছে শুইয়ে দিয়ে তোমরা সবাই বাইরে গিয়ে বিশ্রাম কর গে। আর ভয় নেই – আমি মরব না।”

গল্প থেকে শিক্ষাঃ

১. অতিরিক্ত রাগের বশে মানুষ নিজের ক্ষতি করে ফেলে। তাই যে কোনো কাজে ধৈর্য্যধারণ করা শিখতে হবে। অন্নপূর্ণা ধৈর্য্যধারণ করতে পেরেছিল বলেই তাদের সংসার টিকেছিল।

সানট্যান কি? এর প্রভাব ও দূর করার কার্যকরী সব উপায়

২. অন্যের সন্তানকে নিজেরই সন্তানতুল্য মনে করা। অমূল্যকে বিন্দু নিজের ছেলের মতো করেই মানুষ করেছিল। তাকে ঘিরেই সে বেঁচে ছিল, যা সবাই পারে না। নরেনের সাথে মিশে অমূল্য খারাপ পথে পা বাড়াবে বলে বিন্দু বেশ উদ্বিগ্ন ছিল।

গল্পটি কারা এবং কেন পড়বেনঃ

কিশোর – কিশোরীরা যারা মাত্র বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছে, তাদের জন্য অবশ্যই এটি সময়োপযোগী বই। এছাড়া বড়রাও এই বইটি পড়লে বেশ ভালো লাগবে আশা করি। সকলেরই মনে নাড়া দেওয়ার মতো বই এটি। তবে সাধু ভাষার বই বলে ছোটরা হয়তো বইটি পড়ে তেমন বুঝে উঠতে পারবে না।

রিভিউ শেয়ার করতে পারেন আপনার ব্যবহৃত সোশ্যাল মিডিয়া গুলোতে। এ ধরনের বিভিন্ন রিভিউ পেতে প্রতিদিন আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। পাঠক বিডির পাঠক হয়ে সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

গুগল নিউজে পড়ুন- পাঠক বিডি

পিডিএফ টি ভালো লাগলে আপনার পরিচতদের সাথে শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
Twitter
Email
Print
Pathokbd Logo

Copyright © 2024 PathokBD.com