শীতকালে চুলের যত্ন

জনপ্রিয় আর্টিকেল

শীতকালে চুলের যত্ন । ১০টি টিপস যা চুল পড়া বন্ধ করবে, থাকবে না খুশকিও

আর্টিকেল এর সূচিপত্র

শীতকালে চুলের যত্ন নিয়ে আমরা প্রায় উদাসীন থাকি। যার কারণে আমাদের চুলের প্রতি যত্নশীল থাকা হয়না। শীতকাল মানেই প্রকৃতির শুষ্ক হয়ে ওঠা। প্রকৃতির এই শুষ্কতার সাথে সাথে চুলও কিন্তু রুক্ষ হয়ে ওঠে। তাই এ সময় চুলের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। বলা হয়, চুলের ওপরেও আমাদের মুখের সৌন্দর্য্য অনেকটা নির্ভর করে। তাই চুলের যত্ন নেওয়া আবশ্যক।

শীতকালে চুলের যত্নঃ

ফেব্রুয়ারির শীতে নিজেকে সুন্দর রাখতে রূপচর্চায় একটি প্রয়োজনীয় অংশ হলো চুলের যত্ন। সঠিক উপায়ে শীতকালে চুলের যত্ন নিয়ে চুলের সৌন্দর্য্য বজায় রাখতে পারি। চুলের মসৃণতা ধরে রাখতে শীতের শুরু থেকেই চাই বিশেষ পরিচর্যা। যারা ইতিমধ্যে চুলের যত্ন নেওয়া শুরু করেন নি, খেয়াল করে দেখবেন নিশ্চয়ই এতোদিনে শীতের আমেজে আপনাদের সুন্দর চুলগুলো নিষ্প্রাণ হয়ে গিয়েছে। কারোও বা হয়তো আগের চাইতে বেশি চুল পড়ছে, আবার কারোও হয়তো খুশকি দেখা দিয়েছে। তাই এসব সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন একটু বাড়তি সতর্কতা ও সচেতনতা। এই শীতে যেভাবে আমরা চুলের যত্ন নিতে পারি, তার কিছু টিপস্ উল্লেখ করা হলোঃ

১. মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখাঃ

শীতকালে চুলের যত্ন নেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- মাথার ত্বক কখনোই ময়লা রাখা যাবে না। যাদের ত্বক তৈলাক্ত, তাদের স্ক্যাল্প ময়লা হয়ে যায় তাড়াতাড়ি। তাই তাদের একদিন পর পর চুল শ্যাম্পু করা উচিৎ। আর যাদের স্ক্যাল্প শুষ্ক, তারা সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার চুল শ্যাম্পু করতে পারেন।

২. চর্মরোগঃ

অনেকেরই অ্যালার্জিজনিত বা অন্য কোনো সমস্যার কারণে মাথার ত্বকে চর্মরোগ দেখা দিতে পারে, যা শীতকালে মারাত্মক আকার ধারণ করে। এতে সবসময় চুলকানো, এমনকি রক্তক্ষরণও হতে পারে। শীতকালে চুলের যত্ন নেয়ার সময় এরকম কোনো সমস্যা থাকলে চর্ম বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী শ্যাম্পু বা ঔষধ ব্যবহার করুন।

৩. পণ্য নির্বাচনে সতর্কতাঃ

চুলে ব্যবহারের জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের তেল, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, হেয়ার স্প্রে, হেয়ার কালার, হেয়ার সিরাম ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। অনেকেই নামি-দামি ব্র‍্যান্ড বা লোকাল জিনিস না বুঝেই কিনে ফেলে এবং অনেক সময় তা ব্যবহার করাতে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এক্ষেত্রে কয়েকটি কারণ হতে পারে। যেমন – চুলের সমস্যা না বুঝেই ভুল প্রোডাক্ট ব্যবহার করা, মাথার ত্বকের সাথে স্যুট না করা, আসল পণ্যের মোড়ক দেখে নকল পণ্য ক্রয় ইত্যাদি। তাই যে পণ্যই চুলের জন্য বাছাই করুন না কেন, তা হতে হবে আসল পণ্য এবং আপনার চুলের জন্য মানানসই।

৪. স্ক্যাল্পে মাসাজঃ

সারাদিনের ক্লান্তির পর মাথায় কেউ একটু হাত বুলিয়ে দিলে কতই না ভালো লাগে। শীতকালে চুলের যত্ন নেয়া অলসতার মতো হলেও অন্যের হাতে যত্ন করলে খুব আনন্দ লাগে। আর যদি সাথে পাওয়া যায় চার আঙুলের মাসাজ, তবে যেন মনে হয় সব ক্লান্তি এক নিমিষেই চলে গেছে। সপ্তাহে এক বা দু’দিন চেষ্টা করবেন বাড়িতে বা লেডিস পার্লারে গিয়ে হট ওয়েল মাসাজ নিতে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ তেলসমূহের মিশ্রণ করে হালকা কুসুম গরম করে আঙুলে লাগিয়ে স্ক্যাল্পে মাসাজ করে করে তেলটি লাগানো হয়। তেলটি কুসুম গরম হওয়াতে তার পুষ্টিগুণ স্ক্যাল্পে ও চুলের গোড়ায় ভালোভাবে পৌছে যাবে। অবশ্যই পরিষ্কার চুলে তেল লাগাবেন। 

ময়লা চুলে তেল লাগিয়ে কোনো উপকার পাওয়া যাবে না। নূনতম আধা ঘণ্টা বা এক ঘন্টা চুলে তেল রেখে তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চাইলে আরও বেশি সময় রাখতে পারেন, রাতে তেল মাসাজ করে সকালেও শ্যাম্পু করতে পারেন। সবসময় যে তেল দিয়েই মাসাজ করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।পরিষ্কার হাতের আঙুলের ডগা দিয়েও আলতোভাবে স্ক্যাল্পে কিছুক্ষণ মাসাজ করতে পারেন। এতে করে স্ক্যাল্পের কোষগুলো রিল্যাক্স হবে, মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকবে, রাতে ভালো ঘুমও হবে।

৫.  অতিরিক্ত চুল পড়াঃ

শীতের শুরুতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিরিক্ত চুল পড়ার প্রবণতা থাকলে পেয়াজের রস চুলের গোড়ায় লাগিয়ে এক ঘন্টা পর চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে করে চুল পড়াও অনেকটা বন্ধ হবে এবং নতুন চুল গজাবে। এছাড়া আমলকি, হরিতকী, রিঠা, শিকাগাই ইত্যাদি চুল পড়া রোধের জন্য বেশ কার্যকরী।

৬. তেল ব্যবহারঃ

আমাদের সুস্থ ও সুন্দর স্বাস্থ্যের জন্য যেমন প্রয়োজনীয় ও পুষ্টিকর খাদ্য দরকার, তেমনি স্বাস্থোজ্জ্বল চুল পেতে হলে চুলেরও প্রয়োজন যথেষ্ট পুষ্টি। যার অন্যতম মাধ্যম হলো তেল। বহু আগে থেকেই নারিকেল তেলের প্রচলন বহুল। আসল নারিকেল তেল চুলের পুষ্টি জোগায়। এর পাশাপাশি বাজারে বেলিফুলের তেল, পেয়াজের তেল, জলপাই তেল, মেথির তেল, মধু ও লেবুর নির্যাসে তৈরি তেল পাওয়া যায়, যা সৌন্দর্য্য সচেতন রমণীরা তাদের নিজ প্রয়োজন অনুযায়ী কিনে থাকে। অনেকে আবার বাজারের তেল পছন্দ করেন না, সেক্ষেত্রে আপনারা নিজেরাই বাড়িতে নারকেল হতে তেল উৎপন্ন করে বানিয়ে নিতে পারেন খাটি নারিকেল তেল। অর্গানিক উপায়ে অনেকেই নিজে নিজে কালিজিরা, নিম, বাদাম, আমন্ড, আঙুরের বীজ, জলপাই ইত্যাদি হতে তেল উৎপন্ন করে পরিমাণ মতো মিশিয়ে নতুন এক ধরনের তেল বানিয়ে চুলে লাগায়, যা চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায়, চুল পড়া কমায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

৭. চুলে সিরাম ব্যবহারঃ

শুষ্ক চুলের অধিকারীদের চুল শীতে অতিরিক্ত রুক্ষ হয়ে পড়ে। তখন কোনো শ্যাম্পু বা তেলেই পুরোপুরি রুক্ষতা, খুশকি বা চুলের অন্যান্য সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। তখন চুলের প্রয়োজন বাড়তি যত্ন। এক্ষেত্রে সিরাম বা সিরকা ব্যবহার করা জরুরি। বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের সিরাম পাওয়া যায়। চুলের সমস্যা অনুযায়ী নিয়মিত ও সঠিক নিয়ম অনুযায়ী সিরকা বা সিরাম ব্যবহার করলে সমস্যা থেকে মুক্তি মিলে।

৮. চুলের আগা ফাটা রোধঃ

চুলের আগা ফাটা অনেকের জন্যই একটি সাধারণ বিষয়। এটি চুলের সৌন্দর্য্য নষ্ট করে দেয়। তাই সময় করে নিজে নিজেই বা অভিজ্ঞ কারোও দ্বারা ফাটা আগা কেটে ফেলতে হবে। চুলের আগা কেটে ফেললেই ফাটা আগা গুলো চলে যাবে। তবে এক্ষেত্রে আবারও কিছু দিন পর চুলের আগা ফেটে যেতে পারে। চুল ছেঁটে তাৎক্ষণিকভাবে এ সমস্যা থেকে রেহাই পেলেও আর যেন কখনও এ সমস্যায় পড়তে না হয়,তার জন্য চুলের আগায় সবসময় তেল ব্যবহার কর‍তে হবে। অনেকে মনে করেন, চুলের গোড়ায় তেল লাগালেই পুরো চুলে পুষ্টিগুণ পৌছে যাবে, কিন্তু তা একেবারেই ভুল ধারণা। চুলের আগা ফাটা রোধের জন্য সবসময় চুলের আগাতেও তেল ভালো করে লাগিয়ে রাখতে হয়। এমনকি যাদের চুল বেশ কিছুদিন যাবৎ ফেটে আছে, তারাও বেশি করে তেল দিন চুলে। দেখবেন, কিছু দিনের মধ্যেই চুলের আগা ঠিক হয়ে গেছে। এছাড়া সিরাম ব্যবহারের মাধ্যমেও চুলের আগা ফাটা রোধ করা সম্ভব।

৯. ডিপ কন্ডিশনিংঃ

শীতকালে যাদের চুল অতিরিক্ত রুক্ষ হয়ে গিয়েছে তারা চুল ক্লিনিং এর পাশাপাশি কন্ডিশনিং এবং ডিপ কন্ডিশনিং করে থাকেন চুলের মসৃণতা ফিরিয়ে আনার জন্য। বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের কন্ডিশনার পাওয়া যায়। শুষ্ক ত্বকের জন্য যথোপযুক্ত কোনো কন্ডিশনার ব্যবহার করুন, এটি আপনার চুলকে ড্যামেজ হওয়া থেক্ব বাঁচাবে। প্যাকেটজাত পণ্য ভালো না লাগলে ঘরেই কন্ডিশনিং এর জন্য ঘরোয়া উপাদান দিয়ে প্যাক বানিয়ে ফেলতে পারেন। প্যাকটি চুলে লাগিয়ে ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এভাবে অন্তত সপ্তাহে একদিন চুলে ডিপ কন্ডিশনিং করুন, এক – দু’বার ব্যবহারেই চুলে ফিরে পাবেন হারানো উজ্জ্বলতা।

১০. চুলকে হিট থেকে দূরে রাখুনঃ

ফেব্রুয়ারির শীতের প্রকোপ থেকে বাচতে আমরা অনেকেই গোসলের সময় গরম পানি বা কসুম গরম পানি ব্যবহার করে থাকি। হালকা কুসুম গরম পানি আমাদের দেহের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী, কিন্তু মাথার ত্বকের জন্য বেশ ক্ষতিকর। মাথায় গরম পানি ঢেলে গোসল করলে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়, ফলে চুল বেশি বেশি পড়তে শুরু করে। তাই আমাদের চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে চেষ্টা করব মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালতে। অন্যদিকে যাদের চুল অনেক বেশি ঘন, শীতকালে তাদের চুল যেন সারাদিনেও শুকাতে চায় না। তখন অনেকে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করে থাকেন চুল দ্রুত শুকানোর জন্য।

ক্যান্সার কি? বিভিন্ন ক্যান্সারের কারণ ও প্রতিরোধে করণীয়

এতে করে চুল তাড়াতাড়ি শুকায় ঠিকই, সেই সাথে চুলের অনেক ক্ষতিও হয়ে থাকে। গরম বাতাস চুলের গোড়ায় লাগলে হেয়ার ফল বেশি হয়। আর চুলের অন্যান্য অংশে লাগলে চুলের কিউটিকেলস গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দুর্বল হয়ে যায়, চুল ভেঙে যায়। চুল সোজা বা কোঁকড়া বা বিভিন্ন হেয়ার স্টাইল করার জন্য আমরা যে ইলেকট্রনিক যন্ত্রগুলো ব্যবহার করছি, সেগুলো থেকেও চুল গরম তাপ পায় এবং তা চুলকে নষ্ট করতে বেশ কার্যকরী। তাই যতটা সম্ভব, এই জিনিসগুলোর ব্যবহার না করাই উত্তম এবং একান্তই যদি চুলে হিট দিতেই হয় তবে চুলে হিট প্রোটেক্টর সিরাম লাগিয়ে নিতে হবে। এতে করে চুলের ক্ষতি কিছুটা হলেও কমবে।

আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। কথা হবে আবার কোনো নতুন আর্টিকেলে। ধন্যবাদ।

গুগল নিউজে পড়ুন- পাঠক বিডি

আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার পরিচতদের সাথে শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
Twitter
Email
Print
Pathokbd Logo
সাবস্ক্রাইব
নোটিফিকেশন
guest
Ratting
1 মতামত
মতামত
নতুন পুরাতন
Inline Feedbacks
সব কমেন্ট দেখুন
Tasnia Jahan
Tasnia Jahan
অতিথি
February 9, 2024 8:20 pm
Ratting :
     

ধন্যবাদ পাঠক বিডি

Copyright © 2024 PathokBD.com